বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
 পেশাদার সাংবাদিকদের সবরকম সুরক্ষা দিতে কাজ করছে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার : এম আব্দুল্লাহ। কালের খবর সরকারি রাস্তা উদ্ধারের দাবিতে শাহজাদপুরে মানববন্ধন। কালের খবর ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ককে সুদৃঢ় করতে হবে : ইউএনও মনজুর আলম। কালের খবর মাটিরাঙ্গায় সেনাবাহিনীর মানবিক সহায়তা বিতরণ ও চিকিৎসা সেবা প্রদান। কালের খবর ‘দেশ স্বাধীনের পর তৈরি সংবিধানে কোনো জাতির পিতা ছিল না’ : আদালতকে অ্যাটর্নি জেনারেল। কালের খবর দ্রব্যমূল্যের এই বাজারে খরচ কমানোর ২৭ উপায়!। কালের খবর ওলামাদের মধ্যে রুহানী ঐক্য প্রয়োজন : জামায়াত আমির। কালের খবর আ.লীগ নেতা সুমন খান গ্রেফতার। কালের খবর ৭ হাজারের বেশি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন। কালের খবর নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান : ওয়াদুদ ভুইয়ার। কালের খবর
কোটিপতি স্বামীর পরকীয়ার বলি, লাশ হয়ে ফিরল দেশে

কোটিপতি স্বামীর পরকীয়ার বলি, লাশ হয়ে ফিরল দেশে

এম আই ফারুক আহমেদ : ১৭ বছরের ফুটফুটে মেয়ে প্রিয়া আক্তার। পিতৃহারা মেয়েটি জীবিকার তাগিদে ছুটে আসে ঢাকায়।

মিরপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেয়। সেখানেই তার ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে গার্মেন্টস মালিক মিলন রহমানের। কারখানায় কাজের ফাঁকে ফাঁকে মেয়েটিকে প্রায়ই ডেকে নিয়ে বিরক্ত করতেন মিলন। মালিকের ইশারায় মেয়েটি সাড়া না দিলে একদিন বিয়ের প্রস্তাব দেয়। তারপর থেকে এগোতে থাকে ঘটনা।
মেয়েটা কারখানার মালিকের কথায় একটু একটু করে ভাবতে থাকে। স্বপ্ন দেখে, একটু উন্নত জীবনযাপনের। মনে মনে ভাবে, প্রতিবন্ধী মায়ের চিকিৎসা আর ছোট বোনকে যদি একটু ভালোভাবে রাখা যায়! সেইসব ভাবনা থেকেই শেষ পর্যন্ত কারখানার মালিক কোটিপতি মিলন রহমানের কথায় বিয়েতে রাজি হয় প্রিয়া। কাজী ডেকে তাকে বিয়ে করেন মিলন এবং তিন বছর ধরে মিরপুরে প্রিয়াকে নিয়ে সংসার করতে থাকেন মিলন।

এ সময়ের মধ্যে বেশ কয়েক বার বাড়ি বদলেছেন তিনি।

সম্প্রতি মেয়েটি জানতে পারে তার স্বামী আরেকটি মেয়ের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে। প্রিয়া তার কাছে সরাসরি জানতে চায়। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন মিলন। এক পর্যায়ে প্রিয়ার সঙ্গে বিয়ের বিষয়টিও অস্বীকার করতে থাকেন। মারধর করতে থাকেন প্রিয়াকে। এসব ঘটনার পর থানায় মামলা করার হুমকি দিলেই আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠেন তিনি। পরিণতিতে মেয়েটি লাশ হয়ে শহীদ সোহররাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে ঠাঁই নেয়।

প্রিয়ার স্বজনদের অভিযোগ, প্রিয়া আক্তারের স্বামী কোটিপতি মিলন রহমান পরকীয়ার বাধা সরিয়ে দিতেই তাকে মুখে এসিড ঢেলে হত্যা করেছে। সুন্দরী এতিম মেয়েটির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিয়ে করে তিন বছর বসবাস করলো। এখন অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে পরকিয়ায় জড়িয়ে তাকে পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দিয়েছে।     

স্ত্রীকে হত্যার পর থেকেই স্বামী মিলন রহমান পালিয়েছে। এমনকি তার আত্মীয়-স্বজনরাও কেউ আসেনি। প্রিয়া আক্তারের চাচাতো বোন আঁখি আক্তার ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ‘তিন বছর সংসার করার পর প্রিয়াকে তার স্বামী বলেছে যে তাদের নাকি বিয়েই হয়নি। অন্য একটি মেয়েকে নিয়ে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিল তার স্বামী মিলন। সেই সম্পর্কে বাধা দেয়ায় প্রিয়ার মুখে এসিড ঢেলে হত্যা করে পালিয়ে গেছে’।

প্রিয়াকে গুরুতর জখম অবস্থায় গত রবিবার দুপুরে রাজধানীর শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তাররা মেয়েটির মুখে এবং পেটে এসিড জাতীয় পদার্থ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তারা। এসিডের বিষক্রিয়ায় মেয়েটি মারা গেছে, জানান আঁখি।

এ বিষয়ে দারুস সালাম থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি। দারুস সালাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন ইতিমধ্যে ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং মেয়েটির স্বজনদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।

প্রিয়ার স্বজননদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার ধানিসাপা গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের দুই কন্যার মধ্যে বড় প্রিয়া আক্তার। প্রিয়ার মা জাহানারা বেগম মানসিক প্রতিবন্ধী। ছোট কন্যা সুফিয়া আক্তার প্রতিবন্ধী মাকে নিয়েই গ্রামেই বসবাস করেন। দরিদ্র পরিবারের বেড়ে ওঠা প্রিয়া প্রতিবন্ধী মা ও ছোট বোনের মুখে দু’মুঠো খাবারের জোগাড়েই ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকায় এসে তার ফুপু লাকি বেগমের বাড়িতে ওঠেন এবং পরবর্তী সময়ে মিরপুরের একটি গার্মেন্টসে চাকরি নেন। আর সেখানেই মালিক মিলন রহমানের নজরে পড়েন।

প্রিয়া আক্তারের সহকর্মীরা জানান, প্রিয়া সুন্দরী এবং অল্প বয়সী হওয়ায় কারখানার মালিক বিয়ে করেন তিন বছর আগে। মিরপুরের কয়েকটি বাসায় ভাড়া ছিলের প্রিয়া আর মিলন। কয়েক মাস ধরে শুনছি প্রিয়াকে রেখেই অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় মালিক। সেই প্রেমে বাধা দেওয়ার কারণেই মিলন প্রিয়াকে মেরে ফেলছেন।

ধপ্রিয়ার স্বজনরা অভিযোগ করেন, ‘এর আগেও মিলন একাধিক অসহায় মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সর্বনাশ করেছে। বিয়ের কথা বলে ভাড়া বাড়ি নিয়ে অনেকের সঙ্গে থেকেছে। পরিবারের সুখের জন্য ঢাকায় এসেছিল মেয়েটি, আর এখন লাশ হয়ে পিরোজপুর যাচ্ছে। ঘাতক মিলন রহমানের কঠিন শাস্তি দাবি করেন পরিবারের লোকজন।

প্রিয়ার ছোট বোন সুফিয়া আক্তার বোনের মৃত্যুর খবর পেয়ে পিরোজপুর থেকে ছুটে আসেন ঢাকায়। বোনের এমন অবস্থা দেখেই কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। বোনের স্বামীর কঠোর বিচার দাবি করে সুফিয়া আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার বোনকে ওরা মেরে ফেলেছে। ওদের বিচার চাই, ওদের ফাঁসি চাই’।

দারুস সালাম থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন কালের খবরকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি এবং মেয়েটির স্বজনদের সঙ্গেও কথা বলেছি। তদন্ত শেষে বুঝতে পারবো আসলে কীভাবে মেয়েটি মারা গেছে? তবে মেয়েটির পরিবারের সদস্যরা কেউ আমাদের সহযোগিতা করছে না।

কালের খবর/২০/২/১৮

দৈনিক কালের খবর নিয়মিত পড়ুন এবং বিজ্ঞাপন দিন..

কালের খবর মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের একটি প্রতিষ্ঠান
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com